একটি অন্যায় আরেকটি অন্যায়ের জন্ম দেয়। না জেনে কোন মন্তব্য করা ঠিক?

শেরার করুন

স্টাফ রিপোর্টার।

এখানে আসিফ সাহেব প্রথমেই সামনে এসে দাঁড়ান নাই।
তিনি সাধারণ মুসল্লীদের সাথে প্রথম কাতারে ছিলেন।
ইমাম সাহেব যখন কোন একজন কে সামনে আসতে বললেন, কেবলমাত্র তখনই অন্যদের অনুরোধে তিনি সামনে আসলেন।

এবার প্রশ্ন হল, ইমাম সাহেব কেন সামনে একজন কে ডাকলেন?
এর কারণ হল, ইমাম হলেন দুইজন। একজন মূল ইমাম, আরেকজন মূল ইমামের ডান পাশে সহযোগী ইমাম। মূলত সহযোগী ইমামের দাঁড়ানো কে প্রথম কাতার বানানোর ইচ্ছাতেই পিছন থেকে একজন কে ডাকা হয়েছে।
এখানে বেশ কয়েক টা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এক. নামাযে কি দুইজন ইমাম রাখার বিধান আছে?
উত্তর: ইসলামী শরীয়তে নামাযে সরাসরী দুইজন ইমাম রাখার কোন প্রমাণ নেই এবং বৈধ নয়। বরং নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত মাত্র একজন ইমাম থাকবেন। ইমামের সহযোগী হিসাবে এক বা একাধিক মুকাব্বীর ( যিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে নামাযের তাকবীর সহ অন্যান্য বিষয়গুলো উচ্চ আওয়াজে বলবেন।যেমন; ইমামের পরে উচ্চ আওয়াজে আল্লাহু আকবার বলবেন, রুকুতে যাওয়ার সময়ও…)
অসংখ্য হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।

ইমামের বরাবর পিছনের কয়েকজন এমন ব্যক্তিগণ থাকার চেষ্টা করবেন, যারা ইমামতি করার যোগ্যতা রাখেন। সকল মুসল্লী ইমামতি করার যোগ্যতা রাখলে তুলনামূলক জ্ঞানী ও উত্তম মানুষদের উচিত ইমামের বরাবর পিছনে প্রথম কাতারে থাকা।
কেননা, আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ সাঃ বলেছেন
لِيَلِنِي مِنْكُمْ أُولُو الأَحْلاَمِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ أخرجه مسلم
“বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। অতঃপর এ গুণে যারা তাদের নিকটবর্তী তারা পর্যায়ক্রমে এদের কাছাকাছি দাঁড়াবে।”
সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৫৮
। (অনুবাদ:ফাউন্ডেশনঃ ৮৫৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৬৭)

নামাযে ইমামের সমস্যা হলে তিনি চলে যাওয়ার সময় পিছন থেকে একজন কে ঠেলে ইমামের স্থানে পাঠাবেন। অথবা ইমাম কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে নামাযের মাঝেই  প্রস্থান করলে বা  মারা গেলে , পিছন থেকে কোন একজন ইমামের স্থানে যেয়ে অবশিষ্ট নামায সম্পন্ন করবেন।
যেমন; উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে নামাযে আহত করা হলে আব্দুর রহমান বিন আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু অবশিষ্ট নামায সম্পন্ন করেন। তাদের মত জালীলুল কদর সাহাবী থাকতেও তাদের জন্য আলাদা কাতার করা হয় নাই, এবং নামাযে একাধিক ইমাম রাখা হয় নাই।

দুই. যেকোন সময় ইমামের সাথে কাতারবদ্ধ হওয়া যাবে?
উত্তর: স্বাভাবিক অবস্থায় ইমাম একাকি সামনে থাকবেন। মুসল্লীগণ পিছনে কাতারবদ্ধ থাকবেন।
পিছনে কেবলমাত্র জায়গা সংকুলান না হলে, মুসল্লীরা ইমামের সাথে দাঁড়াতে পারবেন।
একজন হলে শুধুমাত্র ডানে দাঁড়াবেন। দুইজন হলে একজন ডানে ও অন্যজন বামে। এরপর যত সদস্য বৃদ্ধি পাবে, পর্যায় ক্রমে ইমামের দুইপাশে দাঁড়াবেন।

আর পুরো জামা‘আতে কেবলমাত্র একজন মুসল্লি থাকলে তিনি ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবেন। দুইজন হলে দুইজনই পিছনে দাঁড়াবেন।মাত্র একজন মুসল্লি নিয়ে জামা‘আত শুরু হওয়ার পর দ্বিতীয় মুসল্লী আসলে প্রথম মুসল্লীকে টেনে নিয়ে দুইজন মিলে ইমামের পিছনে কাতার বানাবেন।

তিন. নামাযে ভি আই পি নামে কোন কাতার রাখা যাবে?
কেবলমাত্র নিরাপত্তার অজুহাত ব্যতীত ভি আই পি কাতার রাখার কোন প্রকার প্রমাণ নেই এবং অনুমতিও নেই।

সারাংশ: ভুল সমূহ ও সমাধান।
এক.এই জামা‘আতে দুইজন ইমাম রাখা হয়েছে। যেটা অবৈধ।
বরং দ্বিতীয় ইমাম বা আরো বেশি ইমাম থাকলে তারা কেবলমাত্র খাতা কলমে থাকবেন। তারা প্রথম কাতারে সাধারণ মুসল্লীদের সাথে থাকবেন। ইমামের কোন সমস্যা হলে তাদের কেউ অবশিষ্ট দায়িত্ব পালন করবেন।
দুই. ভি আই পি কাতার বানানো হয়েছে। অথচ এখানে নিরাপত্তার জন্য এটা করা হয় নাই। এটা অন্যায়।
তিন. ইমামের সাথে না দাঁড়িয়ে বরং বরং কিছুটা দূরে ও পিছনে দাঁড়িয়েছে।
এটা সম্পূর্ণ দলীল বহির্ভূত অন্যায় কাজ হয়েছে। ইমামের সাথে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হলে ইমামের বরাবর পায়ে পা মিলে দাঁড়াতে হবে।

উল্লেখ্য: এখানে আসিফ সাহেবের উল্লেখযোগ্য দোষ নেই। দোষ ইমাম সাহেবের। এই সবগুলো অন্যায় তারা প্রস্তুত করে রেখেছে।তবে,তিনি একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা তাঁর জন্য ফরজ। এখানে ঘাটতি নিঃসন্দেহে দোষ।

এখানে আরেকটি বিষয়, যেটা কেউ উল্লেখ করেছেন না। সেটা  হল, অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে যে, এই অন্যায়গুলো তারা নিয়মিত প্রতি বছর করে আসছেন।
কিন্তু, উপদেষ্টা সাহেব দাঁড়ানোর কারণে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে গেছে। যুগ যুগান্তর তারা এই বানোয়াট কর্ম ধর্মের নামে চালিয়ে যাচ্ছেন।