টেকনাফ পৌরসভা‌ প্রশাসনিক ভবন স্থানান্তর: কার স্বার্থে? কেন এই উদ্যোগ?

শেরার করুন

মুসলেহ উদ্দিন সাইম খান ( বিএ)              জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার।                 দৈনিক বৈষম্য মুক্ত।

টেকনাফ পৌরসভার বর্তমান প্রশাসনিক ভবনটি পৌর এলাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। দীর্ঘদিন ধরে এখান থেকেই জনসাধারণ পৌরসেবা গ্রহণ করে আসছে।

এখন শোনা যাচ্ছে—বর্তমান এই প্রশাসনিক ভবনের পরিবর্তে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে সেটিতে পৌরসভার কার্যক্রম স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হবে পৌরসভার একেবারে পূর্ব প্রান্তে, নাফ নদীর তীরবর্তী লবণ মাঠ এলাকায়—সম্ভবত জিরো লাইনের ( zero line ) সন্নিকটে বা তার আশেপাশে।

এই উদ্যোগ নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন ও উদ্বেগ:

১. কেন এই স্থানান্তর?

বর্তমান ভবন থেকে জনগণ সেবা পাচ্ছে। তাহলে কেন এবং কার স্বার্থে এত দূরে ভবন সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা?

২. এই স্থানান্তর কতটা জরুরি?

মাত্র ১৬ হাজার (কম/বেশি হতে পারে) ভোটার সংখ্যার ছোট্ট পৌরসভা টেকনাফে বর্তমান ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তাহলে এই মুহূর্তে ভবন সরানো কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল?

৩. জনসেবার প্রভাব কী হবে?

যেখানে সহজে যাতায়াত করা যায় না, সেখানে ভবন নিলে সাধারণ মানুষ কীভাবে পৌরসেবা গ্রহণ করবে? এতে কি ভোগান্তি বাড়বে না?

৪. এটি কি কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের অংশ?

নাফ নদীর তীরে সীমান্তবর্তী জায়গা কেন বেছে নেওয়া হলো? এর পেছনে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কাজ করছে কি?

৫. নতুন ভবনের জন্য দানকৃত জমি – সেটিই কি একমাত্র বিকল্প?

যে জমিতে নতুন পৌর ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে, সেটি সম্প্রতি পৌরসভার নামে দান করা হয়েছে ( খোঁজ নিলে দেখা যাবে প্রকল্প গ্ৰহনের অনেক পরে জমি দান করা হয়েছে )। তবে এটিই একমাত্র বিকল্প—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। দানকৃত মানেই সেখানে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করতে হবে—তা নয়। জমিটি পৌরসভার নিজস্ব মালিকানাধীন সম্পত্তি হিসেবে পরবর্তীতে জনস্বার্থে অন্য যেকোনো উপযোগী কাজে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।

সুতরাং প্রশ্ন হলো—জনসাধারণের দিক বিবেচনা না করে কেন সেই জমিতেই ভবন নির্মাণের জন্য এত তোড়জোড়? এটা কি প্রকৃতপক্ষে পৌরবাসীর সুবিধার কথা ভেবে, নাকি অন্য কোনো স্বার্থ বাস্তবায়নের অংশ?

আ.র. বদির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা ও আমার নৈতিক অবস্থান

এই ভবন স্থানান্তরের পেছনে যে পরিকল্পনা চলছে, তা নতুন কিছু নয়। এটি সাবেক সাংসদ আ.র. বদির বহুদিনের একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ধারাবাহিক অংশ, যার সূত্রপাত বহু আগে থেকেই তার নানা ধরনের ভূমিকা লক্ষ্য করা গেছে। ২০২২ সালে, যখন এই পরিকল্পনার প্রথম ধাপের প্রয়াস দেখা যায়, তখন আমি একজন নাগরিক হিসেবে এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলাম এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথম প্রতিবাদ জানাই।
মাত্র একটি নাগরিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করায় আ.র. বদি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে সামাজিক মাধ্যমে অশালীন মন্তব্য করে ( যা-এক ধরনের হুমকি) বিষয়টি আড়াল করার অপচেষ্টা চালান। সে সময় তার ঘনিষ্ঠ মহলও একইভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়- যা একজন নাগরিকের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।

তবুও আমি আমার নৈতিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হইনি এবং আজও পৌরবাসীর স্বার্থে সেই অবস্থানে অটল রয়েছি। পৌর নাগরিক হিসেবে আজও আমি অধিকাংশ পৌরবাসীর পক্ষেই কথা বলছি।

আজ টেকনাফের সচেতন ছাত্র – যুবসমাজ এবং পৌরবাসী এই বিষয়ে সোচ্চার হয়েছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। এখন প্রয়োজন পুরো পৌরবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ।

বর্তমানে মেয়রের দায়িত্বপ্রাপ্ত টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতি আহ্বান
আপনি এই বিষয়ে পৌরবাসীর উদ্দেশ্যে একটি পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিন।

পৌর ভবন থাকবে পৌরবাসীর সুবিধার কেন্দ্রে, গুটিকয়েক লোকের স্বার্থের প্রান্তে নয়।