
এস আর সাকিল – নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের অধিকার সাধারণ জনগণের। বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে এসব পণ্য সরবরাহ করে জনগণের দুর্দশা লাঘব করাই সরকারের উদ্দেশ্য। তবে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় টিসিবির পণ্য সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি না করে উচ্চমূল্যে বাজারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৬নং পাড়ইল ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন ওয়ার্ড সদস্যের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
অনিয়মের হাতেনাতে প্রমাণ:
২৮ মার্চ (শুক্রবার) নিয়ামতপুর উপজেলার ৬নং পাড়ইল ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, এটি কোনো নতুন ঘটনা নয়, বছরের পর বছর ধরে এমন দুর্নীতি চলছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. রেজাউল ইসলাম টিসিবি পণ্য সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণের পরিবর্তে তা দাদরইল গ্রামের আব্দুর মান্নানের কাছে চড়া দামে বিক্রি করেছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাদরইল গ্রামের বাসিন্দা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আসার সময় দেখেন, মো. জামিলের চার্জার ভ্যানে প্রায় ৫০ বস্তা টিসিবি পণ্য দাদরইল গ্রামের আব্দুর মান্নানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে দাদরইল বাজারের আব্দুর মান্নান জানান, টিসিবির স্মার্ট কার্ড না থাকলেও তিনি ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. রেজাউল ইসলামের কাছ থেকে ৩০টি কার্ডের পণ্য কিনেছেন।
অনিয়মে জড়িতদের নাম উঠে আসছে:
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ৬নং পাড়ইল ইউনিয়ন পরিষদের টিসিবির ডিলার মেসার্স ‘বরেন্দ্র ভ্যারাইটি স্টোর’ এবং এর মালিক হোসনে আরা বেগমসহ কয়েকজন ওয়ার্ড সদস্য—মো. রেজাউল ইসলাম, আজিজুল ইসলাম, সাফিউল ইসলাম—এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারা সাধারণ মানুষের মাঝে পণ্য বিক্রির পরিবর্তে তা চড়া দামে বাজারে বিক্রি করে আসছেন। এদিকে, ইউনিয়ন পরিষদের পাশে মো. সাইম নামে এক মুদি ব্যবসায়ীর দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ৫০টি কার্ডের টিসিবি পণ্য সেখানে মজুদ করা হয়েছে। সাইম জানান, মহিলা সদস্য মোসা. মারুফা বেগম তার কাছে এসব পণ্য বিক্রি করেছেন।
জনসাধারণের অভিযোগ ও ক্ষোভ:
ওয়ার্ড সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের কাছে টিসিবির পণ্য চাওয়া হলেই সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। স্থানীয় বাসিন্দা মো. মান্নান বলেন, ‘আমাকে টিসিবির পণ্য নিতে তিন দিন ঘোরানোর পর জানানো হলো, পণ্য শেষ। অথচ পরের দিন দেখি, বাজারে বিভিন্ন দোকানে সেই পণ্য বিক্রি হচ্ছে।’ আরও কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, ওয়ার্ড সদস্যরা প্রথমে টিসিবির পণ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। পরে চক্রের মাধ্যমে তা বাজারে বিক্রি করেন এবং লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযুক্তদের বক্তব্য :
৬নং পাড়ইল ইউনিয়ন পরিষদের টিসিবির ডিলার হোসনে আরা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অভিযুক্ত ওয়ার্ড সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন ধরেননি।
প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে হুমকি:
অন্যদিকে টিসিবি নিয়ে মারাত্মক অনিয়মের এই প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া জন্যে বিভিন্ন মহলকে দিয়ে প্রতিবেদককে হুমকি দেয়া হয়েছে। সংবাদ প্রকাশ না করার জন্যে সাবধান করে দেয়া হয়েছে। সংবাদ প্রকাশ হলে প্রতিবেদককে দেখে নেয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে অভিযুক্ত ওয়ার্ড মেম্বাররা।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া:
এ বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান সজল বলেন, ‘এমন ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। তবে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘ ইউপি সচিব মো. একরামুল হক জানান, ‘আমাদের কাছে ২৭২২টি কার্ডের তালিকা থাকলেও ২৪৩৬ পিস স্মার্ট কার্ডের পণ্য পাওয়া গেছে। তবে কেউ যদি অনিয়ম করে থাকে, সেটা আমার জানা নেই। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘টিসিবির পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’