মানববন্ধনে অভিযোগঃ রংপুর জেলা ট্রাক, ট্যাঙ্ক লরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে অনিয়মের জাল।

শেরার করুন

স্টাফ রিপোর্টর।

ট্রেড ইউনিয়ন গণতান্ত্রিক কাঠামোর একটি অপরিহার্য অংশ, যা শ্রমিকদের অধিকার ও ন্যায্যতা রক্ষার জন্য কাজ করে। তবে যখন এই সংগঠনগুলো দুর্নীতি ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দখলে চলে যায়, তখন তা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার পরিবর্তে তাদের শোষণের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। রংপুর জেলা ট্রাক, ট্যাঙ্ক লরি, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়ন বর্তমানে এমন এক বিতর্কিত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, যেখানে প্রকৃত শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। আর ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব অবৈধভাবে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটায়, আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, রংপুর কার্যালয়ের সামনে ট্রাক, ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ শ্রমিকদের আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে শ্রমিক প্রতিনিধিগণ বলেন,
ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রের ১ ও ৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে, শুধুমাত্র ট্রাক, ট্যাঙ্ক লরি ও কাভার্ড ভ্যানের চালক, হেলপার ও ক্লিনাররাই সদস্য হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ভোটার তালিকায় হাজার হাজার ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগেরই কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, এমনকি তারা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত নন।

এছাড়া, ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য শতাধিক শাখা কমিটি গঠন করেছে, যেখানে সদস্যদের বেশিরভাগই প্রকৃত শ্রমিক নন। এসব শাখা কমিটি কার্যত ক্ষমতাসীন নেতাদের স্বার্থ রক্ষা ও নির্বাচনী কারচুপির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে প্রকৃত শ্রমিকদের ভোটাধিকার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।
তাদের অভিযোগ,ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সাধারণ সভায় মোট সদস্যদের অন্তত ৬৬% উপস্থিতি থাকতে হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন
মাত্র ৩৫০-৪০০ জন সদস্য, যা মোট ভোটারের ১০%-এরও কম। তা সত্ত্বেও, এই সভায় কার্যনির্বাহী কমিটিকে বহাল রেখে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও উদ্বেগজনক হলো, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের নির্বাচন করার প্রক্রিয়া। কমিটির প্রধান করা হয়েছে একজন
কাউন্সিলরকে, সহকারী হিসেবে রাখা হয়েছে ট্রাক মালিক সমিতির একজন নেতাকে, এবং কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও শ্রমিক নন। এভাবে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজেদের অবস্থান সংহত করছে।
তারা বলেন,শ্রম অধিদপ্তর ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির দায়িত্বে থাকলেও, এই ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সাধারণ শ্রমিকদের পক্ষ থেকে হাজার হাজার ভুয়া ভোটার ও অবৈধ শাখা কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও, তদন্ত না করে শ্রম দপ্তর বরং কার্যত ক্ষমতাসীন নেতাদের পক্ষ নিয়েছে।
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন যে ,সাধারণ সভায় কোরাম পূরণ হয়নি। অথচ, আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপপরিচালক ইউনিয়ন নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভোট পর্যবেক্ষণে যান এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, তিনি ক্ষমতাসীন ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত এবং তার ভূমিকা অনিয়মকে প্রশ্রয় দিয়েছেন।

প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ: শ্রমিকদের আন্দোলন ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

মানববন্ধন আয়োজনকারীরা বলেন ,এই অনিয়মের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের পক্ষ হতে একাধিকবার দরখাস্ত দেয়া হয়েছে এবং তারা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন—এই নির্বাচন যেন নথিভুক্ত করা না হয়,
কোরামহীন সাধারণ সভার সমস্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে,
শ্রম অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাছাই কমিটি গঠন করে ভুয়া ভোট বাতিল করা ও প্রকৃত শ্রমিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নতুনভাবে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে হবে,
শ্রম দপ্তরের কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও ভাই ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, মো: হাবিবুর রহমান বুলেট, মোঃ সাইদুল ইসলাম সাঈদ, ফেরদৌস রহমান, আইয়ুব আলী ,রফিকুল ইসলাম, বিদ্যুৎ হোসেন প্রমুখ।