ডেক্স রিপোর্ট
বাবলা গাছেদের আমরা শেষ করে দিচ্ছি
অনেকটাই, আফ্রিকার দেশ মালি হাজার
একর জমিতে নতুন করে এই বাবলা গাছ
রোপণ করেছে, বাবলা কষের যে কোটি
টাকার বাণিজ্য হয় আন্তর্জাতিক বাজারে!
হাজার হাজার বছর আগে মিসরীয়রা বাবলা গাছের কষ ব্যবহার করতেন নানা ধরনের খাবার তৈরির উপরণ হিসেবে। খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি সেই সময় থেকেই রং ও ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার হতো গাম অ্যারাবিক নামে পরিচিত এই কষ। গেল শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও সারাহা মরুভূমি এলাকায় গাম অ্যারাবিকের ছিল রমরমা বাণিজ্য। কিন্তু জলবায়ু, জ্বালানি হিসেবে বাবলা গাছের অতিমাত্রার ব্যবহার ও রাজনৈতিক কারণে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে সহস্রাব্দ-প্রাচীন সেই বাণিজ্যের পসার। মিসর, সুদান, মালি, কেনিয়াসহ অনেক দেশে গুরুত্বপণ্য রপ্তানিযোগ্য পণ্যটির উৎপাদন নেমে আসে মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশে।
আফ্রিকার দেশ মালিতে ১৯৬০ সালের দিকেও ১০ হাজার টনের বেশি অপরিশোধিত গাম অ্যারাবিক উৎপাদিত হতো। বর্তমান বাজার দরে তার দাম ছিল অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু জ্বালানি হিসেবে বাবলা গাছের অতিমাত্রার ব্যবহার ও রাজনৈতিক কারণে এই কষের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে দেশটিতে। ১৯৯২ সালে দেশটি মাত্র ৩২ টন অপরিশোধিত গাম অ্যারাবিক রপ্তানি করে। এরপর থেকে অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে শুরু করে সেখানে। ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশটিতে বনভূমির পরিমাণ কমে ১০ লাখ একরের বেশি। যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল বাবলা গাছ। ওই সময়টাতে কেনিয়া, সুদানেও কমে এই কষের উৎপাদন।
তবে আশার কথা, চলতি শতকে এসে বিশ্বজুড়ে গাম অ্যারাবিকের চাহিদা শুরু হয়েছে নতুন করে। বিশ্বের নানা অঞ্চলে খাবারের স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে রং ও ওষুধ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে কদর বাড়ছে মরুভূমির এই উদ্ভিদের কষের। যার কারণে সাহারা অঞ্চলজুড়ে ফের বাড়তে শুরু করেছে বাবলা গাছের সংখ্যা, বাড়ছে এর আঠা বা কষের বাণিজ্যও।
মালিতে সরকারি উদ্যোগে গত দুই বছরে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে নতুন করে বাবলা গাছ রোপণ করা হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগেও লাখ লাখ নতুন বাবলা গাছ লাগিয়েছেন দেশটির বিভিন্ন এলাকার উদ্যোক্তারা। কেনিয়ায় কয়েক হাজার মানুষ বাবলা কষ উৎপানে নিজেদের নিয়োজিত করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। গেল কয়েক বছরে বিশ্বজুড়ে সুদানের গাম অ্যারাবিকের চাহিদায় নতুন মাত্রা পাওয়ায় সেখানেও নতুন করে বাবলা গাছ বাড়ানোর শতাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সিসিকো নামে কেনিয়ার এক কষ সংগ্রহকারী বিবিসিকে জানান, জ্বালানি হিসেবে তারা বড় একটি বাবলা গাছ মাত্র ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন। অথচ একটি গাছের কষ থেকে প্রতি বছর এর চাইতে ঢের বেশি টাকার কষ সংগ্রহ করা যায়। আর সেটা চলে কয়েক দশক ধরে। তাই তারা এখন বাবলা গাছ কেটে বিক্রি করার চাইতে এর আঠা সংগ্রহের ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সিসিকো জানান, ২০১৯ সালে তিনি বাবলা কষ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহের বাইরেই প্রায় ২ লাখ টাকা জমাতে পেরেছেন। এর আগে কখনো তিনি এত টাকা জমানোর কথা চিন্তা করেননি। বিবিসি জানাচ্ছে, সিসিকোর মতো সাহারা মরু এলাকার হাজার হাজার মানুষের স্বচ্ছলতা আসছে এই বাবলার কষে।
আফ্রিকার আদি নিবাসী এই উদ্ভিদ এখন এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায়ও পাওয়া যায়। তবে সাহারা অঞ্চলের উদ্ভিদে যে কষ পাওয়া যার তার গুণগত মান পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ঢের এগিয়ে। ফলে তার দামও বেশি। মালি, সুদান বা কেনিয়া থেকে আমদানি করা গাম অ্যারাবিক ভারতেও প্রতি কেজি ১০ হাজার টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়।