জাকির হোসেন
স্টাফ রিপোর্টার
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সচিবালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন দায়িত্বরত পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। সর্বশেষ চলতি বছরের প্রথমদিকেও পুলিশের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ নিরাপত্তা নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু তা অদ্যাবধি বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি সচিবালয় ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তুলতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিক উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। বুধবার গভীর রাতে ভয়াবহ আগুন লাগার পর বেরিয়ে আসছে নানা দুর্বলতার তথ্য। আছে পদে পদে সমন্বয়হীনতার অভিযোগও।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গেট পাশ ছাড়া ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রবেশ করতে না দেওয়া, অটোমেটিক ইলেকট্রিক গেট চালু করা, পর্যটন কর্তৃপক্ষের রেস্টুরেন্ট রেখে সাধারণ হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ করা এবং সচিবালয়ের নিজস্ব পুলিশ ইউনিট গঠনসহ বেশকিছু প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
সচিবালয়ের অভ্যন্তরে একাধিক জায়গায় পান-সিগারেটের দোকান দেখা যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসহ পুলিশের বিশেষ শাখার অনুসন্ধানের ভিত্তিতে এসব দোকান স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রাজনৈতিক তদবিরে ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হয়। এতে নামকাওয়াস্তে পুলিশ ভেরিফিকেশন হলেও সংশ্লিষ্টদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উঠে আসে না।
সূত্র বলছে, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিক বা কর্মচারীদের নামে ইস্যুকৃত পাশ ঘোষণা ছাড়াই নিয়মিত হাতবদল হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি অনলাইন ডেলিভারিম্যানরা গেটে এলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পক্ষ থেকে লোক পাঠিয়ে তাদের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক সময় পুলিশের সামনেই তারা নিরাপত্তা তল্লাশি এড়িয়ে ভেতরে ঢুকে যান।
সূত্র জানায়, খোদ সচিবালয়ের ভেতরেই সরকারি গাড়ি থেকে তেল চুরির ব্যবস্থা চালু আছে। গাড়িচালকদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন এ অনিয়ম চলে আসছে। কিন্তু এর প্রতিকারে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি গাড়ি থেকে তেল নামিয়ে আবার সচিবালয়েই লুকিয়ে রাখা হয়। এছাড়া রাতে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থান নিষিদ্ধ হলেও হোটেল কর্মচারী পরিচয়ে অনেকেই সেখানে রাত্রিযাপন করেন।
অপরদিকে সচিবালয়ে সুন্দরী পার্টিদের নিয়মিত অবাধ প্রবেশ বাড়তি নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করে। কারণ, প্রভাবশালীদের বান্ধবীদের জন্য কোনো পাশ ইস্যু করা হয় না। তাদেরকে গাড়ি পাঠিয়ে আনা হয়। কেবল ফোনকলে বলা হয় ছেড়ে দিতে।