মৃত্যুকে প্রতি পদক্ষেপে স্মরণ করতে হবে!

শেরার করুন

জাকির হোসেন
স্টাফ রিপোর্টার,ঢাকা

জীবন হলো একটা নির্দিষ্ট সময়ের সমষ্টি। প্রতিনিয়ত আমাদের হায়াতের দিনগুলো ফুরিয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুর দিকে আলোর গতিতে এগিয়ে চলছি আর অন্তিম সেই জীবনের নিকটবর্তী হচ্ছি। অথচ আমরা কত উদাসীন! আমরা দুনিয়ার মোহের পেছনে ছুটে চলি নিরন্তর। আমরা ভুলে যাই আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যের কথা। আমরা কখনো কি ভাবি প্রতিনিয়ত যে পথের দিকে নিরন্তর ছুটে চলছি সে পথের গন্তব্য কোথায়? পৃথিবীর রং-রসে মেতে মৃত্যুকে হয়তো ভুলে থাকা যায়, কিন্তু মৃত্যুকে এড়ানো বা মৃত্যু থেকে পালিয়ে বাঁচা যায় না। অথচ আমাদের সোনালি প্রজন্মের মানুষগুলো মৃত্যুকেই জীবনের লক্ষ্য বানাতেন। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়াই ছিল জীবনের চরম উদ্দেশ্য। আমরা দুনিয়ার সবকিছুর জন্যই প্রস্তুতি নিই। চাকরি, বিয়ে, ক্যারিয়ার এমনি নিত্যদিনের বাজার-সদাই করার জন্যও আমাদের একটা প্রস্তুতি থাকে কিন্তু প্রস্তুতি নেই কেবল মৃত্যুর জন্য!

সন্ধ্যায় বেঁচে আছি পরের দিনটা দেখতে পারব কিনা সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার সকালে জীবিত আছি এমন লোক যে সন্ধ্যা অবধি বেঁচে থাকবে সেটাও অনিশ্চিত।

বাড়ি-গাড়ি, সন্তানসন্ততি, আত্মীয়স্বজন, ভক্তকুল সবাইকে রেখে সবকিছু ছেড়ে কেবল এক টুকরা কাফনের কাপড় সঙ্গে নিয়ে কবরে প্রবেশ করতে হবে। বিলাসিতায় কাটানো সুন্দর দেহটা পোকার খোরাক হবে। জীবনের সব আশা ও আকাঙ্ক্ষা মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। মানুষ তাই মরতে চায় না। সর্বদা সে মৃত্যু থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বলে দাও, নিশ্চয়ই যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছ, তা অবশ্যই তোমাদের কাছে উপস্থিত হবে। অতঃপর তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে সেই সত্তার কাছে, যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সবকিছু সম্পর্কে অবগত। অতঃপর তিনি তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন’ (জুম’আ ৬২/৮)।

জন্মের পর নিশ্চিত একটা বিষয় হলো মৃত্যু। আমরা মুমিন আমরা বিশ্বাসী এক আল্লাহর একত্ববাদে কিন্তু সেই বিশ্বাস আমাদের দ্বীনের পথে অবিচল রাখতে পারে না। আমরা জানি দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, মৃত্যুর পর কেয়ামত দিবসে রবের সামনে দণ্ডায়মান হতে হবে। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয়ে হিসাব দিতে হবে। সে দিনের ভয়াবহতা পারে না আমাদের ফজরের সালাতে জাগিয়ে তুলতে, ফরজ বিধানগুলো যথাযথ পালন করতে। আমরা দুনিয়ার ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করি কিন্তু অনন্ত যে জীবন সেটার জন্য কতটুকু সঞ্চয় আমাদের সেটা ভাবি না। আমরা সব জানি এবং বুজি কিন্তু পালন করার ব্যাপারে কোথায় যেন গাফিলতি হয়ে যায়। আল্লাহ কুরআনে বলেন, ‘মুমিনদের জন্য কি এখনো সে সময় আসেনি যে, তাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে বিগলিত হবে? তারা তাদের মতো যেন না হয়, যাদের আগে কিতাব দেওয়া হয়েছিল। তাদের ওপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের বেশির ভাগ পাপাচারী।’ (সূরা হাদিদ, আয়াত : ১৬)।

মুমিনের উচিত মৃত্যু আসার আগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা। দুনিয়ার চাকচিক্যে নিজেকে হারিয়ে ফেল না। রাসূলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের জানাজায় অংশগ্রহণ করতে বলেছেন এবং তাতে এক কিরাত্ব তথা ওহোদ পাহাড়ের সম পরিমাণ নেকি ও দাফন শেষ করে ফিরে এলে তাতে দুই কিরাত্ব সমপরিমাণ নেকির কথা বলেছেন। (বুখারি হাদিস : ৪৭)। যাতে অন্যের জানাজা দেখে নিজের জানাজার কথা স্মরণ হয়। অন্যের কবরে শোয়ানো দেখে নিজের কবরের কথা মনে হয়। কবরের ভয়াবহতা স্মরণ হয়। মৃত্যুকালীন অসহায় অবস্থার কথা স্মরণ হয়। কেননা মৃত্যু যে কোনো সময় এসে যেতে পারে। তাই মুমিনের সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করা উচিত। এতে দুনিয়ার প্রতি আসক্তি দূর করবে, ইমান বৃদ্ধি করে, আত্মশুদ্ধিতে এবং পরকালের জন্য পাথেয় খুঁজতে সাহায্য করবে।