
নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজার পৌরসভায় জাতীয়তা সনদসহ অন্যান্য সনদপত্র পেতে হয়রানির করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও সেই হয়রানি কমেনি বলে অভিযোগ করছেন সেবাপ্রার্থীরা।
অভিযোগ মতে, জাতীয়তা সনদ বা প্রত্যয়নপত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ এবং ওয়ারিশ সনদ পেতে মাসের পর মাস ঘুরানো হচ্ছে। মূলত দায়িত্বরত লোকজনকে টাকা না দিলে এই হয়রানি করা হচ্ছে। এই হয়রানিতে জড়িত রয়েছেন মিজান, সজল ও সায়েম নামে পৌরসভার তিন কর্মচারী।
অনেক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরও কক্সবাজারে পৌরসভার হয়রানি কমেনি। বিশেষ করে জাতীয়তা সনদ ও জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে যে হয়রানি তার কোনোভাবেই কমেনি। এখনো পৌরসভার একটি সিন্ডিকেট এসব সেবা কার্যক্রম কব্জা করে রেখেছে। এই সিন্ডিকেটের হোতারা হলেন, পৌরসভার গাড়িচালক মিজান, অফিস সহকারী সজল এবং আরে কর্মচারী আবু সাদাত সায়েম। বর্তমানে তারা তিনজনের কাছে সেবাপ্রার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিজান পৌরসভার গাড়ি চালক হিসেবে চাকরিত রয়েছেন। কিন্তু গাড়ি না চালিয়ে তিনি এখন সনদ শাখায় অবৈধভাবে রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজ করছেন। অবৈধভাবে এই দায়িত্ব থেকে তিনি সনদ ইস্যুর নামে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে অবৈভাবে টাকা আদায় করছেন।
পৌরসভার বৈদ্যঘোনার ফাতেমা আকতার নামের এক সেবাপ্রার্থী জানান, তিনি ১৫ দিনের জন্য ওয়ারিশ পেতে ৫০০ টাকা ফিসহ আবেদন জমা দেন। কিন্তু ১৭ দিন পরে যোগাযোগ করলে রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা মিজান ফাতেমাকে জানান, তার আবেদনটি হারিয়ে গেছে। মূলত উৎকোচ না দেয়ায় মিজান ফাতেমার ওয়ারিশ সনদটি ইস্যু করেনি।
একইভাবে পৌর প্রি-প্যারাটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম জানান, দেড়মাস আগে আবেদন জমা দিয়েও উৎকোচ না দেয়া তিনি ওয়ারিশ সনদ পাননি। কিন্তু টাকা দিলে দ্রুত সনদ পাওয়া যায়। খোদ পৌর কর্মচারী রিদুয়ান অভিযোগ করেন, উৎকোচ না দেয়ায় তার মাসহ চার আত্মীয়ের জাতীয়তা সনদ পাননি।
অফিসসহকারী সজল কান্তি দাশের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ বেশি। কর শাখার একজন কর্মচারী জানান, তার পিতার জন্য ওয়ারিশ সনদ নিতে গেলে ৫০০ টাকা দাবি করে সজল। এছাড়াও আরো বহু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নুনিছড়া এলাকা ফরিদুল আলম নামে এক সেবাপ্রার্থীও অভিযোগ করেন টাকা না দেয়া সজল থাকে সনদপত্র দেয়নি। একইভাবে টাকা না দেয়ায় গণ-আন্দোলনে আন্দোলন করা বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীও সনদ পায়নি। এই সজল অফিস সহকারী হলেও সনদ বিতরণ বিভাগের দায়িত্ব পালন করে সেবাপ্রার্থীদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি সজলের অনিয়ম ও হয়রানি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন সাবেক কাউন্সিলর ইয়াছমিন আকতার।
অন্যদিকে আরেক অভিযুক্ত আবু সাদাৎ মোঃ সায়েমের বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। তিনি ইতিপূর্বে মহেশখালী পৌরসভায় কর্মরত ছিলেন। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে সেখান থেকে কক্সবাজার পৌরসভায় বদলী করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বহু। এই আবু সাদাৎ সায়েম হলেন, মিজান ও সজলের প্রধান সহযোগি। তিনিই মিজান ও সজলকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে সনদ বাণিজ্য করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। যারা অবৈধ টাকা দেয় না, তাদের সনদ না দিয়ে দিনের পর দিন হয়রানি করে যাচ্ছেন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন দালাল লালন করে আবু সাদাৎ। এসব দালালদের মাধ্যমে সনদ বাণিজ্য করে যাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিজিবি ক্যাম্প এলাকার মোস্তফা, সমিতি পাড়ার হাছিনা, নুনিয়াছড়া এলাকার নূরুচ্ছফা মিলে সনদ বাণিজ্যের ফাইল সংগ্রহ করে। সেভাবে নানা অনিয়মের মাধ্যমে লাখ লাখ হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার সচিব রাসেল চৌধুরী বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে মানুষের বহু অভিযোগ এটা সত্য। এর প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত এই তিনজনকে ওই দপ্তর থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।