বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন।

শেরার করুন

 

,, মোহাম্মদ আবুল কালাম প্রতিনিধি গাজীপুর সদর।

,,বর্তমানে ফিলিস্তিন, বিশেষ করে গাজা উপত্যকা, এক ভয়াবহ মানবিক সংকট ও যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ আজও থামেনি। নিচে ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।

,,গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

প্রায় ৫১,০০০ মানুষ নিহত, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

১ লক্ষ ১৬ হাজারের বেশি মানুষ আহত, এবং লক্ষাধিক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

,,ইসরায়েল গাজার প্রায় অর্ধেক এলাকা দখল করে বাফার জোন তৈরি করেছে, যা ফিলিস্তিনিদের বসবাসযোগ্য জায়গা আরও সংকুচিত করেছে।

দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ শহর বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে, ফলে মানবিক সহায়তাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

শুজাইয়া ও খান ইউনুসে স্থল অভিযান চলছে, যেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে।

,,ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, তবে শর্তগুলোতে নিরস্ত্রীকরণ ও জিম্মি মুক্তির বিষয় রয়েছে।

হামাস এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করলেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

কাতার, মিশর, এবং যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখছে।

,,বর্তমানে ফিলিস্তিন, বিশেষ করে গাজা, শুধু একটি ভূখণ্ড নয়—এটি একটি মানবিক ট্র্যাজেডির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধ, রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা—সবকিছু মিলিয়ে এটি বিশ্ব বিবেকের জন্য এক বড় প্রশ্ন।

 

খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকট চলছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাজাকে “গণকবর” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

,,নিশ্চিতভাবেই। নিচে ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা দেওয়া হলো, যেখানে ঐতিহাসিক পটভূমি, বর্তমান যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

,,ফিলিস্তিন সংকটের মূল শিকড় ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। তখন লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি বাস্তুহারা হন—যা ইতিহাসে “নাকবা” নামে পরিচিত। এরপর বহুবার যুদ্ধ হয়েছে (১৯৬৭, ১৯৭৩ ইত্যাদি), যার ফলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড (গাজা, পশ্চিম তীর) ইসরায়েলের দখলে চলে যায়।

> এই সংকট কেবল একটি ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নয়, বরং জাতিগত, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও সংঘাত।

,,২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজার উপর বিপুল সামরিক হামলা চালায়।

,,বিশ্ব শক্তিগুলোর ভূমিকা এখানে গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের “আত্মরক্ষার অধিকার”কে সমর্থন করে, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতনের বিপরীতে কার্যকর প্রতিবাদ তুলনামূলকভাবে দুর্বল।

চীন, রাশিয়া, তুরস্ক এবং মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে থাকলেও তা বাস্তব পরিবর্তনে পর্যাপ্ত নয়।

> এ পরিস্থিতিকে অনেকেই “দ্বিমুখী মানবাধিকার চর্চা” হিসেবে অভিহিত করছেন।

,,একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—ইসরায়েলের লক্ষ্য হামাস হলেও তার অধিকাংশ হামলা পড়ে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের উপর। এতে ফিলিস্তিনি জাতি আরও কোণঠাসা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ক্রমেই বাড়ছে।

,,হামাস একটি রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগঠন, যাদের কৌশল ও লক্ষ্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবে তাদের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় ইসরায়েলি নিপীড়নের বিপরীতে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠায়।

,,দীর্ঘস্থায়ী এই সংঘাতে একটি দুই-রাষ্ট্র সমাধান বারবার আলোচনায় এসেছে, কিন্তু ইসরায়েলি দখলনীতি ও রাজনৈতিক অনমনীয়তা এ পথে বড় বাধা।

গাজার ভবিষ্যৎ এখন মূলত তিনটি সম্ভাবনার মুখে:

1. সম্পূর্ণ সামরিক দখল ও পুনর্গঠন (ইসরায়েলের পরিকল্পনা),

2. আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ও সীমিত স্বায়ত্তশাসন,

3. দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধাবস্থা ও সংঘাত—যা মানবিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয় আরও বাড়াবে।
,,ফিলিস্তিন সংকট আর কেবল একটি আঞ্চলিক সংঘাত নয়—এটি একটি আন্তর্জাতিক বিবেকের পরীক্ষা। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ, আন্তর্জাতিক আইন, এবং মানবতাবোধ সবই আজ চ্যালেঞ্জের মুখে।

> এই সংকট আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একটি জাতিকে দমন করে কখনোই স্থায়ী শান্তি আনা সম্ভব নয়। ন্যায়বিচার ও পারস্পরিক স্বীকৃতিই একমাত্র পথ।